Tuesday 2 September 2014

বিজ্ঞানের আলোকে সালাত

বিজ্ঞানের আলোকে সালাত
- প্রফেসর ড. মোহা: একরামুল হক

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বা নামাজ কায়েম করা সারা মুসলিম উম্মাহর ওপর ফরজ করেছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। ঈমানের পরেই সালাতের স্থান, যা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপরই ফরজ। বলা হয়েছে ‘আস্সালাতু ইমাদ উদ্-দ্বীন’। সালাত হচ্ছে দ্বীনের বা ধর্মের খুঁটি।

 

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সালাতের ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণে যাওয়ার আগে, নামাজের আগে কেন অজু করার বিধান দেয়া হলো সে ব্যাপারে আলোচনা করা প্রয়োজন। বহু মাওলানাকে আমি প্রশ্ন করেছি, নামাজ আদায়ের আগে অজু কেন করতে হবে? এক বাক্যে সবাই বলেছেন, দেহ ও মনের পবিত্রতা অর্জনের জন্য। কিন্তু ব্যাপারটার সাথে আমি কোনো অবস্থাতেই একমত হতে পারিনি। কারণ, এখানে প্রশ্ন, নামাজ পড়েন কারা? উত্তর মুসলমানেরা। কিন্তু যারা মুসলমান তারা কি অপবিত্র থাকেন? আমি বাহ্যিক পবিত্রতার কথা বলছি। যদি অপবিত্র না থাকেন তবে পবিত্রতার প্রশ্ন আসে কেন? ব্যাপারটা কি শুধুই পবিত্রতা অর্জনের জন্য অজু করা, নাকি অন্য কিছু!! ইসলাম তথা ইসলামের আরকান ও আহকামের ব্যাপারে আমরা গতানুগতিক পন্থা অবলম্বন করে চলেছি; কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ ঠিক হচ্ছে কি না, তা ভেবে দেখার প্রয়োজন বোধ করি না। 

পবিত্র কালামে পাকে সূরা ইয়াসিনের প্রথম আয়াতেই আল্লাহ ঘোষণা করেছেন ‘মহাবিজ্ঞানময় কুরআন’। পবিত্র কুরআন শরিফই হলো বিজ্ঞানের উৎস। অর্থাৎ অদ্যাবধি বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার মূল ভিত্তিই হলো কুরআন। তাই পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যাও বিজ্ঞানভিত্তিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। 

হাদিস শরিফে নবী করিম সা: বলেছেন, ‘আসসালাতু মেরাজুল মুমিনিন’। অর্থাৎ সালাত হচ্ছে মুমিনদের জন্য আল্লাহর সাথে সাাৎ বা দিদারে ইলাহির মাধ্যম। কিন্তু সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে কারো সাাৎ হয়েছে কি না, তা কি কেউ হলফ করে বলতে পারবেন আজকের মুসল্লিরা? হাজারে হয়তো দু-একজন বলতে পারেন। তাহলে কী দাঁড়াল? আমাদের নামাজ যথাযথভাবে হচ্ছে না। অর্থাৎ আমরা মুমিনদের সংজ্ঞার ভেতর পড়ছি না। কারণ আমরা যদি আমাদের প্রকৃত মুমিন বলে দাবি করি, তবে নিশ্চয় নামাজে আল্লাহর সাথে আমাদের সাাৎ হতে হবে। 

বিভিন্ন শাখায় বিজ্ঞানের অনেক অগ্রগতি সাধিত হলেও, মানুষের মন, মনের সাথে দেহের সম্পর্ক, আমরা নিজে চলছি না কারো দ্বারা চালিত হচ্ছি অথবা আমাদের চলাচল কি কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে, নাকি আমরা নিজেরাই নিজেদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি ইত্যাদির ব্যাপারে বিজ্ঞানের খুব একটা অগ্রগতি পরিলতি হয় না। তবে ইদানীং মন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যে মানসিক টেনশন কমানো যায় এবং দেহ ও মন সুস্থ রাখা যায়, তার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় Silva Method কিংবা Quantum Method-এর সাহায্যে মন নিয়ন্ত্রণ করে। 

এ পর্যন্ত নামাজের আগে অজু করার বিধানের ব্যাপারে যতটুকু জানতে পেরেছি তার বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা কিন্তু শুধু পবিত্রতা অর্জনই নয় আরো অন্য কিছু। নামাজ বা সালাতের মাধ্যমেই মুমিনদের সাাৎ হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাথে। কাজেই নামাজের আগে অজু করার বিধান দেয়ার কারণ নিশ্চয় নামাজের সাথে এর যোগসূত্র অবশ্যই আছে। এই যোগসূত্রের কারণ জানার জন্য অজু কেন করি সে প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে মানুষের মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে, (যা নির্ভর করে brain frequency level  এর ওপর) সে ব্যাপারে আলোকপাত করা প্রয়োজন। কারণ অজুর সাথে মানুষের মনের সম্পর্ক আছে। আর মন নিয়ন্ত্রণ হয় brain frequency-এর কমবেশির ওপর। 

মানুষের মস্তিষ্কে bio electricity তৈরি হয় (তা দিয়ে ২০ watt-এর বাল্ব জ্বালানো সম্ভব) এবং সেই শক্তিই মানুষকে চালিত করে। (Miracle of electricity in the body, by Harun Yahya, An internet publication) কিন্তু সব সময় electricity-এর frequency বা পরিমাণ একই ষবাবষ-এ থাকে না, অর্থাৎ মানুষের মস্তিষ্কে bio-electricity তৈরির পরিমাণ কম বেশি হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মানুষ যখন কাজে ব্যস্ত থাকে তখন bio-electricity উৎপাদন এক রকম থাকে, উত্তেজিত হলে তা বেড়ে যায় এবং মন প্রশান্ত হলে brain frequency কমে যায়। আবার ঘুমালে brain frequency আরো নিচে নেমে যায়। এ পর্যন্ত জানা যায়, যে বিজ্ঞানীরা মানুষের brain frequency কে চারটি level -এ ভাগ করেছেন (The Silva Mind control Method for getting help from the other side, Jose Silva et.al P44, 1987. Pocket Book Publication New York)। সে level গুলো সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। 

১. বিটা লেভেল (â level) : এই level-এর frequency 14 থেকে 20 cycles/sec, (কেউ কেউ 25cycles/sec ধরেন, cycles/sec  হচ্ছে electricity-এর unit)। এটা আমাদের পার্থিব জগতে কাজকর্মে ব্যস্ত থাকার সময় প্রয়োজনীয় frequency level । এই level-এ আমরা স্পর্শ, স্বাদ, গন্ধ, শব্দ শোনা ও দেখার কাজ করি। একে outer conscious level বলে। 

২. আলফা লেভেল (á level) : এটা বিশেষ প্রয়োজনীয় level। এটাকেই আমরা আধ্যাত্মিক level বলে থাকি, এখানে সময়ের মান শূন্য। এটাকে বলা হয় Inner conscious level । আমরা সবসময় এ level থাকতে পারি না সাংসারিক ব্যস্ততা ও মানসিক উত্তেজনার কারণে। এর বিস্তৃতি হলো ৭ থেকে 14 cycles/sec । আরো একটা জিনিস আমাদের মনে রাখা দরকার তা হলো আমাদের চিন্তাশক্তি। কখন আমরা চিন্তা করতে পারি? যখন আমাদের মন শান্ত থাকে। বেশি উত্তেজিত হলে কিংবা ঘুমিয়ে গেলে আমরা কোনো চিন্তা করতে পারি না। আমাদের এই চিন্তা করার শক্তিটাও কিন্তু আমাদের brain frequency -ও ওপর নির্ভরশীল। চিন্তার এই level কে আমরা বলি Thought level । পরীক্ষা করে দেখা গেছে এই Thought level-এর বিস্তৃতি ৭ থেকে 20cycles/sec অর্থাৎ Thought level আলফা level -এর নিচ থেকে বিটা level -এর ওপর পর্যন্ত বিস্তৃত। বিটা level -এর ওপরে কিংবা আলফা level -এর নিচে Thought level যেতে পারে না। সে কারণে মানুষ ঘুমালে চিন্তা করতে পারে না। তেমনি মানুষ উত্তেজিত হলেও চিন্তা করতে পারে না। কারণ উত্তেজিত অবস্থায় brain frequency বাড়তে থাকে কিন্তু Thought level আর বাড়ে না। উত্তেজনাবশত মানুষ কাউকে হত্যা পর্যন্ত করতে পারে। Brain frequency down হয়ে বিটা লেভেলে এলে বা উত্তেজনা প্রশমিত হলে কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করে। কারণ সে তখন Thought level এ প্রবেশ করে এবং চিন্তা করে কাজটা ভালো করেনি। হঠাৎ কেউ বেশি উত্তেজিত হলে brain frequency বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত bio-electricity তৈরির ফলে আমাদের দেহের যন্ত্রগুলো তা সহ্য করতে পারে না। ফলে ছিন্নভিন্ন হয়ে বন্ধ বা ফিউজ হয়ে যায়। তা আর চালু করা সম্ভব হয় না। 

আরো দুটো level আছে। তা হলো ৩. বিটা- level: যার frequency 4 থেকে 7cycle/sec এ সময় মানুষ গভীর ঘুমে অচেতন থাকে। ৪. ডেল্টা- level: কোনো কারণে যেমন অসুস্থতা কিংবা আঘাতজনিত কারণে মানুষের Brain frequency যদি 4cycle/sec এর নিচে নেমে যায় তবে সমূহ বিপদ। Brain frequency 4 থেকে 0 cycles/sec ই হচ্ছে ডেল্টা লেভেল এর পরিধি। এই level টাই হচ্ছে unconscious level । এই লেভেলে মানুষের জৈব-বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় মানুষের প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়, যাকে আমরা ‘কমা’ বলি।

যাক আমরা আলফা level -এর কথায় ফিরে আসি। আলফা level -ই হচ্ছে মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা level । আমাদের brain -এ আলফা level -এর মাধ্যমেই বেশ কিছু information আদান প্রদান হয় যা আমরা বুঝতে না পারলেও অনুভব করতে পারি। আমাদের সৃষ্টিকর্তার সাথেও যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো আলফা level । মুনি-ঋষি ও সাধকগণ সবসময় আলফা level -এ অবস্থান করেন। পার্থিব কোনো ব্যাপারে তারা কখনো উত্তেজিত হন না। আর আমরা সাধারণ মানুষ থাকি সব সময় বিটা level -এ। তবে দু’সময় আমরা আলফা level অতিক্রম করে থাকি। তা হলো, ঘুমাতে যাওয়ার সময় এবং ঘুম থেকে উঠার সময়। সাংসারিক চাপ, অফিসের বিড়ম্বনা এবং পার্থিব জীবনের নানা ঝামেলায় সাধারণ মানুষ থাকে বিটা level -এ। তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? সাধারণ মানুষকে বিটা- level থেকে আলফা-ষবাবষ এ যেতে হলে কিছু বাড়তি পদ্ধতি অনুসরণ করে যেতে হবে। অনেক পদ্ধতির মধ্যে একটা পদ্ধতি হলো মন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। একইভাবে আমাদের সৃষ্টিকর্তার সাথে সাাৎ করতে গেলেও আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে brain frequency কে down করতে হবে, অর্থাৎ বিটা level (20-14 cycles/sec †_‡K 14-7cycles/sec) এ নিয়ে যেতে হবে। 

মনকে নিয়ন্ত্রণ করে আলফা লেভেলে নিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। সে রকমই একটা পদ্ধতির প্রথম ধাপ হলো নামাজের আগে অজু করা। নিয়ম হলো প্রথমে অজুর নিয়ত করা, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে সাাতের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য পার্থিব সব কিছুকে দূরে ঠেলে মনকে আল্লাহর দিকে রুজু করা বা ফেরানো। তারপর ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে অজু করা। কোনো প্রকার তাড়াহুড়ো brain frequency কে আবারো ওপরের দিকে নিয়ে যাবে। প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় আলাদা দোয়া আছে। উদ্দেশ্য, মনকে আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের দিকে ধাবিত করানো। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, হাত ধৌত করার সময় মনে মনে বলতে হবে, হে আল্লাহ তুমি পবিত্র সত্ত্বা, আমি আমার হাত দিয়ে যত গুনাহ করেছি তা অজুর পানির সাথে ধুয়ে পরিষ্কার করে দাও, যাতে আমি আমার পবিত্র হাত নিয়ে তোমার সাথে সাাৎ করতে পারি। এভাবে প্রত্যেক অঙ্গ ধোওয়ার সময় একইভাবে নিয়ত করা জরুরি। লণীয় বিষয় এই যে, যে অঙ্গগুলো দ্বারা গুনাহর কাজ সঙ্ঘটিত হয় বা হতে পারে সেই অঙ্গগুলোকেই ধৌত করতে বলা হয়। অজুর সময় ঘাড় মাসেহ করার কারণ হলো, ঘাড়ের মধ্য দিয়ে সব স্নায়ু মাথা থেকে সারা শরীরে ছড়িয়ে গেছে। তাই ঘাড়ে পানি লাগালে স্নায়ুর উত্তেজনা প্রশমিত হয়, যা মানুষকে আলফা level -এ নিয়ে যাওয়ার পথকে ত্বরান্বিত করে। তা ছাড়া আমাদের সব দেহের স্নায়ুতন্ত্রের প্রান্তগুলো দুই হাত এবং পায়ের তালু ও আঙুলের অগ্রভাগের বিভিন্ন বিন্দুতে অবস্থান করায় হাত পা পানি দ্বারা ধৌত করলে ধীরে ধীরে উত্তেজনা প্রশমিত হতে থাকে। আমার মনে হয় অজু এমন একটা মাধ্যম যার সাহায্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাথে সাাতের জন্য মানুষকে তৈরি করা হয়। সুবহান আল্লাহ! কিন্তু সাধারণ মানুষ শুধু অজু করেই আলফা level এ যেতে পারে না, একাগ্রতার অভাবে। তাই নামাজের মধ্যেও কতগুলো পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলা হয়, যা brain frequency কে নিচের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। যেমন কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো। শুধু মুখমণ্ডলকে কিবলামুখী করলেই চলবে না, সব অঙ্গপ্রতঙ্গকে কিবলামুখী করতে বলা হয়েছে। (you have to concentrate your mind to a certain direction)। যা আপনার brain frequency down করার সহায়ক। আরো আছে, তাকবিরে তাহরিমা বাঁধার পর সেজদার স্থানের প্রতি নজর করতে বলা হয়েছে। কারণ কী? কারণ একই (you have to concentrate your mind to a certain point) ফলে brain frequency down আরো নিচে নামবে। নামাজের মধ্যে অনেক point আছে, যা brain frequency down করার সহায়ক। যেমন বলা হয়েছে রাব্বুল আলামিনের কুদরতি পায়ে সিজদা করতে হবে। মনে করতে হবে তুমি তাকে দেখছ। সেটা সম্ভব না হলে মনে করতে হবে আল্লাহ তোমাকে দেখছেন। আরো বলা হয়েছে নামাজে এমনভাবে দাঁড়াবে যেন তুমি পুলসিরাতের ওপর দাঁড়িয়ে আছো। তোমার ডানে বেহেস্ত ও বামে দোজখ। হিসাব করে দেখা গেছে সম্পূর্ণ নামাজটাই হচ্ছে মানুষের মনকে আলফা লেভেল-এ নিয়ে যাওয়ার একটা বিশেষ পদ্ধতি।

Brain frequency কে down করে আলফা level -এ নিয়ে যেতে না পারলে নামাজে মানুষের মেরাজ হবে না। ব্যাপারটা না জানার কারণে অধিকাংশ মানুষের নামাজে মেরাজ হচ্ছে না। যদি ব্যাপারগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ইমামদের কাছ থেকে শুনত, তবে সাধারণ মানুষ আল্লাহর সাথে সাাৎ করার চেষ্টা করতে পারত। কাজেই আমাদের শিায় গলদ আছে। মুমিন হতে গেলে মানুষকে অবশ্যই শিতি ও জ্ঞানী হতে হবে। কারণ নবী করিম সা: বলেছেন, ‘আল ইলমু ফারিজাতুন আলাকুল্লে মুসলিমিন ওয়া মুসলিমাতিন।’ যার অর্থ হলো প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। এখানে সামগ্রিক জ্ঞানের কথাই বলা হয়েছে। জ্ঞানী হলে মানুষের কোনো কিছু বুঝার দতা বৃদ্ধি পায়। কালামে পাক বুঝার জন্য মানুষকে প্রথমে জ্ঞান অর্জন করতেই হবে। মাতৃভাষার জ্ঞান না থাকলে অন্য ভাষায় জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। মুসলমানদের জন্য জ্ঞান অর্জন করাই প্রথম কাজ। পরবর্তী কাজ হলো ভাষাগত জ্ঞান অর্জন করা। 

অনেক মাওলানাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা নামাজ পড়ি কেন? বেশির ভাগই বলেছেন, আল্লাহর হুকুম, নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করতে বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার অযুত কোটি ফেরেশতা রাতদিন আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করছে, তারপরও মানুষ সৃষ্টি করার প্রয়োজন পড়ল কি শুধু ইবাদত করার জন্য? নিশ্চয়ই না! 

অজু ও নামাজ সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সুধী পাঠক হয়তো কিছুটা হলেও হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছেন। এখানে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমরাও তো নিয়ম অনুযায়ী অজু করি ও নামাজ আদায় করি; কিন্তু আল্লাহর সাথে সাাৎ হয় না কেন? এর ব্যাখ্যা সম্ভবত আমাদের পাপকাজের ফলে আমরা প্রায়ই উত্তেজিত থাকি। মন ছটফট করে, হয়তো অজু সঠিকভাবে করতে পারি না, হয়তো নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে পারি না। নিয়ম অনুযায়ী দাঁড়ানো, রুকু ও সিজদা করার মধ্যে কোনো আন্তরিকতা থাকে না। কারণ আমরা বুঝি না আমরা কী করছি। তবে আমরা আলফা level -এ যেতে না পারলেও পদ্ধতিগত কারণে আমাদের brain frequency কিছুটা down হয় এবং বিটা level -এর নিচের দিকে অবস্থান করায় মাথার জঞ্জাল কিছুটা পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে অনেক ভুলে যাওয়া কথা মনে পড়ে, যেমন চাবিটা কোথায় রেখেছি তা মনে পড়ে, খুঁজে না পাওয়া মানিব্যাগটা কোথায় রেখেছি তা খুঁজে পাওয়া যায় ইত্যাদি। 

আর একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু আমরা আলফা level এ প্রবেশ করতে পারব এবং আল্লাহ তায়ালার সাথে দিদার লাভ করা সম্ভব হবে। যারা রাতের অন্ধকারে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়েন তারা বেশির ভাগই নামাজরত অবস্থায় আলফা level -এ ঢুকে পড়েন। আপনি কিভাবে বুঝবেন আলফা level কোনটি? একটু মনোযোগ দিলেই বোঝা যায়। যেমন নামাজরত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি না বসে আছি, অন্ধকারে আছি নাকি আলোতে আছি কিছুই খেয়াল থাকে না। নিজের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। মন এক অজানা প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। কতণ নামাজরত অবস্থায় আছি তার খেয়াল থাকে না। এটাই আলফা level বা মারেফাতের জগত। নামাজে দাঁড়িয়ে মারেফাত হাসিল করতে পারলেই প্রকৃত আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভ করা সম্ভব হবে। এ জগতে সময়ের মান শূন্য। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ একই বিন্দুতে আবদ্ধ। 

আন্তরিকভাবে, মনপ্রাণে সঁপে দিয়ে ইবাদত করলেই সালাতে আলফা level -এ যাওয়া সম্ভব এবং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাথেও সাাৎ করাও সম্ভব হবে। 
লেখকঃ প্রতিষ্ঠাতা প্রধান, ফার্মেসি বিভাগ, রাবি